কক্সবাজার, ০৭ অক্টোবর- কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সপ্তাহ জুড়ে চলমান সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। বুধবারও সারা দিন থেমে থেমে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষে অন্তত আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক।
রোহিঙ্গাদের দুই পক্ষের চলমান সংঘর্ষ থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।
সপ্তাহজুড়ে চলা সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক বাংলাদেশিসহ ৮জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এক সঙ্গে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় উক্ত ক্যাম্পে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। এ কারণে বুধবার সকাল থেকে সারা দিন দু’পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নতুন করে উভয় পক্ষে শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে।
এদিন সকাল ১০টার পর থেকে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ভয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে আশ্রয় নেয়। এ সময় রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছেন।
আরও পড়ুন: ইনানি সৈকতে বালুর বাঁধ, তলিয়ে যেতে পারে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ
রোহিঙ্গারা বলছেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইয়াবা ব্যবসা, দোকান থেকে চাঁদাবাজি ও এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মুন্না গ্রুপ ও আনাছ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সকালে মুন্না গ্রুপের লোকজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান (রোহিঙ্গা নেতা) হাফেজ মো. জালাল আহমদ জানান, ইয়াবার ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে মুন্না গ্রুপ ও আনাছ বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। কিন্তু, গত ৪ অক্টোবর থেকে প্রকাশ্যে গোলাগুলি সহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে।
রোহিঙ্গা নারী সোমা আক্তার জানান, সকাল থেকে দিনভর থেমে থেমে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে মুন্না গ্রুপ। এ সময় তাদের হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। ভয়ে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
এদিকে, উক্ত ক্যাম্পে সকাল থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য, পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী টহল জোরদার করে। এ সময় ক্যাম্প থেকে ৪জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশ।
বিকেলে উদ্ভূত পরিস্থিতি পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ডিআইজি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মঙ্গলবার দুপক্ষের সংঘর্ষে ৪জন নিহত হওয়ার ঘটনায় কিছুটা উত্তেজনা বাড়লেও এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার নিহত চারজনের মধ্যে নুরুল হুদা নামের একজন বাংলাদেশি রয়েছে। নিহত সকলের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইনে সেদেশের সেনাবাহিনীর অব্যাহত বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয় নেয়ার এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ক্রমাগতভাবে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এইচ, ০৭ অক্টোবর