ঢাকা, ০৫ অক্টোবর- মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর পাঁচ এজেন্টের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের করা পাঁচ মামলায় এরইমধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার মনির ওআল আমিন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মনির জানান, প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি কেরানীগঞ্জ এলাকায় ২০ লাখ টাকায় বাড়ি কিনেছেন।
অপরদিকে আল আমিন জানান, প্রতারণার টাকায় তিনি ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে সন্তানের জন্মদিন পালন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লেনদেন বাড়ানো এবং উচ্চহারে কমিশনের প্রলোভন দিয়ে চক্রের সদস্যরা অর্থ হাতিয়ে নেয়।
প্রতারক চক্রের সদস্যরা ‘নগদ’ এজেন্ট গুড হ্যান্ড ওয়েরিং মিলস থেকে ২০ লাখ টাকা, পিয়ারলেস থেকে ৫৫ লাখ টাকা, ক্যাশ-টি বাংলাদেশ থেকে এক কোটি ৬ লাখ টাকা, বিকিউ ট্রেড থেকে ২৫ লাখ টাকা এবং ফিনিক্স ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পৃথক পাঁচটি মামলা করেন। এসব মামলায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিজেদের দোষ স্বীকার করে দু’জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, এ আত্মসাৎ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নগদের তিনজন কর্মকর্তা জড়িত।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, নগদের প্রতারক চক্রটি সীমার অতিরিক্ত লেনদেনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন পরিদর্শক আব্দুর রব
সন্দেহের তালিকায় যে তিন কর্মকর্তার নাম এসেছে তারা হলেন: নগদের আঞ্চলিক পরিচালক পরিচয় দেয়া ফখরুল ইসলাম, জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও তানভীর।
তারা মাঠপর্যায়ের এজেন্টদের লেনদেন বাড়ানো ও বাড়তি কমিশন দেয়ার কথা বলে মোট দুই কোটি ৪১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানতে চাইলে নগদের মুখপাত্র জাহিদুল ইসলাম বলেন, যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা প্রতারক চক্রের সদস্য। নগদ কর্মকর্তা হিসেবে যাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা সরাসরি নগদের নিয়োগ করা কর্মকর্তা নন।
তারা ডিলার কর্তৃক নিয়োজিত। তাদের কাজ হল উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ক্রেডিট লোড দেয়া। এ সুযোগে কিছু এজেন্টের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা ক্রেডিট লোড দেয়নি।
নগদের সঙ্গে চুক্তি লঙ্ঘন করে বেশ কয়েকটি এজেন্ট লোভে পড়ে অবৈধভাবে লেনদেন করায় ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতার আল আমিন ও মনির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মনির বলেন, প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি সম্প্রতি রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ এলাকায় ২০ লাখ টাকায় বাড়ি কিনেছেন।
যদিও তিনি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পান। জবানবন্দিতে আল আমিন জানান, তিনি ১৪ হাজার টাকা বেতন পান।
প্রতারণার টাকায় তিনি ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সন্তানের জন্মদিন পালন করেছেন। পাশাপাশি পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন।
ভুক্তভোগী গুড হ্যান্ড ওয়েরিং মিলসের ব্যবস্থাপক কামরুল আশরাফ রানা বলেন, নগদের আঞ্চলিক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফখরুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর তাকে লেনদেন বাড়ানোর জন্য নামামুখী চাপ দেন।
আরও পড়ুন: কুরিয়ার সার্ভিসের নামে প্রতারণা, পাঁচ ‘রয়েল চিটার’ গ্রেপ্তার
তারা টাকা প্রেরণকারী গ্রাহকদের নম্বর সংগ্রহ করতেন। ২২ জুলাই ১০ লাখ টাকা লেনদেন করি। পরে ধীরে ধীরে আমি লেনদেন বাড়াই। তারাও সময়মতো টাকা ফেরত দিতে থাকেন।
দৈনিক এক কোটি টাকা করার পর ‘নগদ’ থেকে দৈনিক ১৪ হাজার টাকা লাভ পেতে থাকি। এক মাস পর নগদ কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তিদের নির্দেশনামতো ২০ লাখ টাকা পাঠাই।
কিন্তু তারা ওই টাকা আর ফেরত দেননি। একপর্যায়ে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।
ইদ্রিস হাসান মাসুম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার কাছে কিছু নম্বর পাঠায়। আমি ওইসব নম্বরে টাকা পাঠাই।
তারা আমার বিশ্বাস অর্জনের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দিত। আমি সকালে টাকা পাঠালে সন্ধ্যায় ফিরে পেতাম। দুই মাসের লেনদেনের পর আমি ২৫ লাখ টাকা পাঠাই।
কিন্তু ওই টাকা আর ফেরত পাইনি। চক্রটি আমার মতো আরও বহু এজেন্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
সূত্র : যুগান্তর
এম এন / ০৫ অক্টোবর