সিলেট, ১৯ সেপ্টেম্বর- নীলাভ গগনে শাদা মেঘের ভেলা। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল উড়ে চলে মাঝ হাওরে বসতি গড়া হিজল করচের বাগানে।
বর্ষায় উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ে তীরে। এসময় হাওরের উত্তাল ঊর্মিমালা দেখে মনে হয় যেন ‘মিনি কক্সবাজার’। আর শরতে শান্ত কোমল হাওর যেন শীতলপাটি বিছিয়ে আহ্বান করে পর্যটকদের। বলছিলাম হাকালুকি হাওরের কথা। যার স্বচ্ছ জলে সাঁতার কেটে, নৌকায় চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করে তৃপ্ত হন পর্যটকরা।
ঋতু ভেদে বদলে যায় হাকালুকির সৌন্দর্যও। তবে শুষ্ক মৌসুমে একেবারেই বদলে যায় হাকালুকির চিরচেনা রূপ। পানি থাকে কেবল বিল-বাদালে। হাওর তখন রূপ বদলে সবুজ চারণভূমিতে পরিণত হয়। যেদিকে চোখ যাবে কেবলই সবুজের সমারোহ। সেসময় পরিযায়ী পাখিদের আগমনে হাওর পরিণত হয় ‘স্বর্গোদ্যানে’।
প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। আকাশে ভেসে বেড়ায় শাদা মেঘের ভেলা। এসময় মনোহারী রূপে পর্যটকদের আকর্ষণ করছে হাকালুকি। হাকালুকি হাওরকে এক পলকে দেখা যায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট থেকে। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
হাকালুকির মাঝ হওরে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় নৌকা, ট্রলার, স্পিড বোট, দোতলা লঞ্চ ও ক্যাপসুল বোটের মাধ্যমে। ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টেই পাওয়া যায় এসব বাহন। ঘুরে আসা যায় মাঝ হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এবং হিজল করচের বাগান। প্রকার ভেদে ঘণ্টাপ্রতি এসব জলযানের ভাড়া ৬শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ছয় উপজেলা জুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। প্রায় ১৮ হাজার ১শ ১৫ হেক্টর গড় আয়তনের মধ্যে ৩৮ ভাগ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়, দুই ভাগ জুড়িতে, ৩০ ভাগ কুলাউড়ায়, ১৫ ভাগ ফেঞ্চুগঞ্জে, ১০ ভাগ গোলাপগঞ্জে ও ৫ ভাগ বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত।
উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ৫টি পাহাড়ি নদী জুড়ি, কন্টিনালা, ফানাই, আন ফানাই ও বরুদল মিলেছে হাকালুকি হাওরে। হেমন্তে এই হাওরের পানি শুকিয়ে চারণভূমিতে পরিণত হয়। ওই সময়ে হাকালুকির জলাশয়গুলো থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়। সেইসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে এই হাওরে। আর অভয়ারণ্য গড়তে লাগানো হয়েছে হিজল-করচ গাছের বাগান। যা মুগ্ধ করে পর্যটকদের।
হাকালুকির প্রেমে ছুটে আসা শফিকুর রহমান চৌধুরী নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, হাকালুকির মুক্ত বাতাসে নৌকায় গা এলিয়ে দিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। আর মাঝ হাওরে ওয়াচ টাওয়ারে গিয়ে ৬ উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি এক পলকে দেখা যায়। এমন সৌন্দর্য যে কাউকে মোহিত করবে।
অনিন্দ্য সুন্দর হাকালুকি, ছবি: বাংলানিউজহাকালুকি হাওরের পাড়ে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে পর্যটকদের সুবিধার্থে ঘাটলা, বসার জন্য বেঞ্চ, নিরাপত্তায় এসএস পাইপ দ্বারা সুরক্ষা ব্যবস্থা করে দিয়েছে সিলেট জেলা পরিষদ। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পর্যটকদের রাত যাপনের সুবিধার্থে বিলাসবহুল কটেজ ও কফি হাউজ নির্মাণ করছেন।
সম্প্রতি হাকালুকি ঘুরে আসা আল্পনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ৭ জনের একটি গ্রুপ হাকালুকি ভ্রমণে গিয়েছিলাম। অনেক ভালো লেগেছে। সময় পেলে আবারো ছুটে যাবো।
আরও পড়ুন- ছন্দে ফিরছে পাহাড়ি পর্যটন
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে নামতে হবে মাইজগাঁও স্টেশনে। সেখান থেকে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টের দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। এছাড়া বাসেও যাওয়া যায়। আর সিলেট থেকে যেতে চাইলে কোর্ট পয়েন্ট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরে যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া নেয় ২৫ টাকা, সিএনজি অটোরিকশায় ৩০ টাকা। আর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ১শ টাকা রিজার্ভ ভাড়ায় যেতে পারেন ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে।
আডি/ ১৯ সেপ্টেম্বর