আন্দোলনের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি ঘটে ২০০২ সালে। ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে ২০০৮ সালে প্রকাশিত 'একুশের সুবর্ণজয়ন্তী' একটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। চলতি বছর গ্রন্থটির প্রকাশনার এক দশক পূর্তি হচ্ছে।
এ সংকলনের অবয়ব ও রূপ গড়ে উঠেছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলাভাষীর ভাষাচর্চা, পরিচর্যা, চিন্তাশীলতা ও চিন্তার বিবর্তনকে ঘিরে। এ গ্রন্থ ইতিহাস না হয়েও ইতিহাসের জীবন্ত উপাদানে ভরপুর। এখানে রচিত হয়েছে অতীতের সাথে বর্তমানের মেলবন্ধন এবং বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের অনিবার্য যোগসূত্র। বাঙালি, বাংলা ভাষা ও বাংলাসাহিত্য নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের যে কোনো গবেষক এই বই থেকে উপকৃত হবেন। বইটিতে ভাষা আন্দোলনের সূচক গ্রন্থের তথ্য, উপাত্ত ও বিষয়বস্তু যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রথম একুশে সংকলনের কথাও। ভাষাসৈনিকদের সাক্ষাৎকার এ বইকে ইতিহাসের দলিলে পরিণত করেছে।
বাংলাভাষীদের জন্য এ গ্রন্থ এমন এক মজবুত হাতল তৈরি করে দিয়েছে, যা এর ভবিষ্যৎকে সমৃদ্ধ করবে বটেই, পাশাপাশি ভাষা ও জাতিসত্তার প্রশ্নে তাদের কখনও বিপথগামী হতে দেবে না। এ বইয়ের উৎসর্গপত্রের মাঝেই রয়েছে এ কথার স্বাক্ষর। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব বাংলাভাষীর উদ্দেশে। বর্তমানে এ ভাষার উচ্চারণ শুধু পঁচিশ-ছাব্বিশ কোটি মানুষের মুখে সীমাবদ্ধ নয়। একুশের রেশ ধরে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' পালনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার স্মরণ একটা বিশ্বজনীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর বাংলাভাষীরাও ভূগোলের সীমান্তরেখা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে।
এ গ্রন্থে চারটি সংকলিত লেখাসহ ৪০০ লেখকের লেখার সমাবেশ ঘটেছে। অবশ্য একই লেখকের একাধিক লেখাও বিষয়ের গুরুত্ব অনুযায়ী ছাপা হয়েছে। আমাদের এ হিসাবের মধ্যে ভাষাসৈনিকদের সাক্ষাৎকারও অন্তর্ভুক্ত। দাবি করা হয়েছে- 'এটি বাংলা ভাষায় এনসাইক্লোপেডিয়া-সদৃশ আকর গ্রন্থ'। এটি এমন এক সত্য উচ্চারণ যার সাথে ভিন্নমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। ২৮টি পর্বে এ গ্রন্থের বিচিত্র বিষয়গুলোকে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি পর্বের রয়েছে স্বতন্ত্র শিরোনাম, সম্পাদকীয় ও সূচি। এতে এই সুবিধা হয়েছে যে, উৎসাহী পাঠক নিজ নিজ পছন্দ, রুচি ও অগ্রাধিকার অনুসারে যে কোনো লেখা বেছে নিতে পারবেন। ক্লান্তি অথবা একঘেয়েমি কাটানোর জন্য যে কোনো বিষয়ান্তরে বিচরণ করতে পারবেন সহজ ও স্বচ্ছন্দে এবং পরিপূর্ণ স্বাধীনতার সাথে। বইটি যদিও ১৭০৪ পৃষ্ঠার তথাপি প্রকাশকের কথা, ভূমিকা ও সম্পাদকীয়সহ এতে ব্যয় হয়েছে আরও ৫৬ পৃষ্ঠা।
এর উপদেষ্টা সম্পাদক আবদুল মান্নান সৈয়দ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসাইন ও অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরীসহ অন্যরা এ বই নির্মাণের পেছনে যে পরিশ্রম করেছেন, তা অনুধাবনযোগ্য। বিপুল এ কর্মযজ্ঞে এর সুযোগ্য সম্পাদক মাহবুব উল্লাহও যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
গ্রন্থটির প্রকাশক অ্যাডর্ন পাবলিকেশন।
গ্রন্থটি গবেষকেদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ পাঠকেরও কাজে আসবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রাজনৈতিক তীক্ষষ্টতাকে আরও শানিত ও প্রাণিত করতে এই গ্রন্থ অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করি। কারণ, এ সিদ্ধান্ত তো কবেই হয়ে গেছে যে, একুশ মানে কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা।
এমএ/ ০৩ ফেবরুয়ারি