Deshe Bideshe

DESHEBIDESHE

ইউনিজয়
ফনেটিক
English
টরন্টো, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩ , ১৬ চৈত্র ১৪২৯

গড় রেটিং: 3.0/5 (252 টি ভোট গৃহিত হয়েছে)

আপডেট : ১১-০৮-২০১৮

উপমহাদেশের ভোটে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

নবনীতা মুখোপাধ্যায়


উপমহাদেশের ভোটে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা  সম্প্রতি বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য প্রধান রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটা সমঝোতা দরকার৷ কেমন সেই সমঝোতা?

যে কোনো রাজনৈতিক দল চায়, ছলে-বলে-কৌশলে ভোটারদের ভোট তাদের পক্ষে নিয়ে যেতে৷ এবং সেটা করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি অগণতান্ত্রিক পথে হাঁটতেও পিছপা হয় না৷ কিন্তু বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে সম্প্রতি অন্য একটি সংকট দেখা দিয়েছে৷ সেখানে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে তুমুল মতবিরোধ দেখা দিয়েছে৷ মতানৈক্য হলে গণতান্ত্রিক পথে তার নিরসনের ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তা হচ্ছে না বলে অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার অভিযোগ করেছেন৷ তাই তিনি নির্বাচন কমিশনের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেছেন৷ নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের এমন আচরণে বাংলাদেশের কমিশন সম্পর্কে জনমানসে অনাস্থা দেখা দিতে পারে৷ ওদিকে কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ব্যালট বাক্সের পরিবর্তে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম চালুর কথা ভাবা হচ্ছে৷  বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তসমূহ এবং মাহবুব তালুকদারের অভিযোগের দরুণ তৈরি হয়েছে নানাবিধ সংশয়৷ উঠে এসেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা৷ পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা৷

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে সর্বস্তরে৷ ভারতে চালু রয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন৷ কিন্তু তার ব্যবহার ও ফলাফল নিয়ে ভারতেই আছে মিশ্র মত৷ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে কিন্তু ব্যালট বাক্সের কদর এখনো কমে যায়নি৷ বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, জোর করে ব্যালটে ছাপ্পা ইত্যাদি এই উপমহাদেশের ভোটের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলে থাকেন, এই সব সমস্যা ইভিএমে এড়ানো গেলেও রয়েছে ভয়ঙ্কর এক বিপদ৷ ইভিএমের মাদার বোর্ড ম্যানিপুলেট করে ভোটের ফলাফল আমূল পালটে দেওয়া সম্ভব৷ তাহলে লাভটা কী হলো!

যে স্বচ্ছ ভোটের জন্য ইভিএমের আগমন ও ব্যালট বাক্সের প্রস্থান, তা যদি বেশি বিপদ ডেকে আনে এবং চূড়ান্ত অগণতন্ত্রের সূচক হয়; তাহলে না হলো ভোটারদের স্বার্থরক্ষা, আবার গণতন্ত্রও ভেঙে পড়ল৷ ইভিএম হ্যাক করার কথা ইতিউতি শোনা যায় বটে৷ বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়া উপমহাদেশের নানা দেশে৷ ভারতের নির্বাচন-ব্যবস্থায় ইভিএম চালু হলেও তা নিরন্তর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছে৷

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সন্দীপন সেন মনে করেন, ‘‘ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার আলোচনাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়—একটি হলো, নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত আইনগত দিক এবং অন্যটি হলো, তার প্রায়োগিক দিক৷ আইনগত দিকটির আবার দুটি বিভাজন—ভারতের সংবিধানে উল্লিখিত নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যবস্থা ও ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির প্রণীত নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন আইনবিধি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চদশ অধ্যায়ে ৩২৪ থেকে ৩২৯ ধারায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলা আছে, যে কমিশন হবে একটি স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা, যেখানে থাকবেন একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং একাধিক (বর্তমানে দুজন) সহকারী নির্বাচন কমিশনার৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদমর্যাদার বিশেষত্ব আছে৷ তাঁর সুপারিশে ভারতের রাষ্ট্রপতি অন্য নির্বাচন কমিশনারদের পদচ্যুত করতে পারেন, কিন্তু মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করতে গেলে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পদচ্যুত করার কারণ ও পদ্ধতি অনুযায়ী তাঁকে ইম্পিচ করতে হয়৷ দেশের প্রায় সর্বস্তরের নির্বাচনে কমিশনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকে৷ সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে—তার নিরপেক্ষতা, ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা প্রদান সমালোচনার মুখে৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র, বহু ধর্ম-ভাষা-জাতি-শ্রেণির দেশে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে—সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র থেকে ইভিএমে ভোট প্রদান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে৷ তবে এতে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই, কারণ, নানা দিক থেকে কমিশন চ্যালেঞ্জের মুখে৷ বিশেষ করে সোশাল মিডিয়া—ফেসবুক বা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এই সব নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কমিশন কী ভূমিকা নেয়, সেটাই দেখার৷''

প্রচারের এমন সব ধারা, সত্য-মিথ্যা গুলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে সেটা সময় বলবে, আপাতত ইভিএম-এর কারচুপি নিয়ে যেসব সংশয় দেখা দিয়েছে—তার পক্ষে এবং বিপক্ষে দু রকম মত পাওয়া যাচ্ছে৷ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন যেমন আছে, তেমনি আছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷ পশ্চিমবঙ্গের এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মীরা পাণ্ডে৷ তাঁর মতে, ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর এক থেকে সোয়া এক মিনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় বার বোতাম টেপা যায় না৷ কেউ যদি ভাবে, বুথ দখল করে আধ ঘন্টায় কয়েকশ' ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাবে; তা কার্যত অসম্ভব৷ পাঁচশ' ভোট দিতে অন্তত পাঁচশ' মিনিট লাগার কথা৷ অন্তত আট থেকে নয় ঘণ্টা বুথ দখল করে সেই কাজ করতে হবে, যা কার্যত অসম্ভব৷ তবে ইভিএম হ্যাকিং নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি৷

কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ অবশ্য বরাবরই ইভিএমের বিপক্ষে৷ তিনি ব্যালট বাক্সের মতো পুরনো পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষপাতী৷ আম আদমি পার্টির একজন বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ আইআইটি থেকে পাশ করা প্রযুক্তিবিদ৷ তিনি নকল ইভিএম হাজির করে হাতেকলমে দেখিয়েছেন এই মেশিন হ্যাক করা কত সহজ! ইভিএমে একটি গোপন সাঙ্কেতিক কোড থাকে৷ সেই সঙ্কেত জানলে ভোটের ফল আমূল বদলে দেওয়া সম্ভব৷ ভারতীয় নির্বাচন কমিশন অবশ্য এই অভিযোগসমূহ মানতে নারাজ৷ নির্বাচন কমিশনের কর্তারা বলছেন, সব দিক থেকে ইভিএম নিরাপদ এবং গণতন্ত্রের হানিকর নয়৷

ইভিএম হোক বা ব্যালটবাক্স, তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো নির্বাচনে স্বচ্ছতা৷ সেই স্বচ্ছতা যদি দেশের নির্বাচন কমিশনের না থাকে, তাহলে যেমন করেই ভোট হোক না কেন, তার মধ্যে বেনোজল ঢুকতে বাধ্য৷ নির্বাচন কমিশন সাধারণত প্রধান শাসক দলের অনুগত হয়, এমন ধারণা জনসাধারণের একাংশের মধ্যে রয়েছে৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক অমিত দাশগুপ্তের মতে, ‘‘ভারতের নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি দেখিয়েছে৷ সব মানুষ নির্ভয়ে বিবেচনা করে ভোট দিতে পারবে, এটা নির্বাচন কমিশনের দেখার কথা৷ যেমন, মিথ্যা প্রচারের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন হস্তক্ষেপ করে না৷ অনেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেন না, কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য ভুল লিখেও পার পেয়ে যান৷ নির্বাচন কমিশন এগুলো দেখে না৷ অর্থের ব্যবহার বা ধর্মকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে নির্বাচনের হাতিয়ার করা হয়, জনগণকে উত্তেজিত করা হয়৷ এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশন কিছু বলে না৷ ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন শাসক দলের যুক্তি মেনে নিচ্ছে, অথচ সারা বিশ্ব এটাকে মেনে নিচ্ছে না৷ প্রচারের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বেঁধে দেওয়া ব্যয়ের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হয়, নির্বাচন কমিশন এই বিধি লঙ্ঘনে কিছু বলে না৷ তবে বুথ দখল, নির্বাচনী কেন্দ্র দখল ইত্যাদি কমাতে নির্বাচন কমিশন অনেকটা সফল৷ কিন্তু নির্বাচনী অঞ্চল দখলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিরপেক্ষ নয়৷ অপরাধী, অর্থবানদের ভোট লুটে নেওয়া নিয়ত ঘটে চলেছে৷ মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের অনেক কিছু করার আছে৷''

ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন৷

সমাজকর্মী ও লেখক দোলন গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘ভারতবর্ষের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, কিন্তু স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা সব সময় সম্ভব হয় না৷ নির্বাচনে যেসব অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলে, বিশেষত কারচুপি—একের ভোট অন্যে দেওয়া—এগুলো নিবারণ করতে বেশির ভাগ সময় নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়৷ নির্বাচনে অসম্ভব রাজনৈতিক হিংসা ঘটে থাকে—পুরুষ তো বটেই, মহিলাদেরও প্রাণ যায়৷ সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখেছি৷ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সব সময় সদর্থক নয়৷ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যথেষ্ট গণতান্ত্রিক হওয়া দরকার, এমনটা লেখা থাকলেও নির্বাচন কমিশন তা রক্ষা করতে ব্যর্থ, যদিও তার ব্যতিক্রম আছে৷''

ব্যতিক্রমী, মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন কাকে বলে, তা দেখিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন নির্বাচন কর্তা টি এন শেষণ৷ কে তিনি? ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷ তাঁর প্রসঙ্গে গবেষক আলতাফ পারভেজ লিখেছেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমাজ ও রাজনীতির জগদ্দল পাথর সরাতে অনেক টিএন শেষণ দরকার৷'' আলতাফের কথাতে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন থাকলেই শুধু চলে না, দরকার সৎ, দৃঢ়চেতা, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, যিনি শাসকের বা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের রক্তচক্ষুকে ভয় পান না, লোভের কাছে মাথা বিকিয়ে দেন না৷ বাংলাদেশের মতো দেশে শেষণের মতো কমিশনার খুব প্রয়োজন৷

ভারত এবং বাংলাদেশ—দুটি দেশের কর্মপরিবেশ এক রকম নয়, দুই দেশের রাজনৈতিক দলের চরিত্রও ভিন্ন, কিন্তু দুটি দেশের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার উৎস এক—সংবিধান এবং বিভিন্ন সময়ে প্রণীত আইনসমূহ৷ আদর্শগত দিক থেকে বাংলাদেশও পারে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে৷ কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সর্বোচ্চ আদালত এবং সেই দেশের সুশীল সমাজের উপর নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও ক্ষমতার ব্যবহার৷

ভারতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেন৷ টিএন শেষণ থেকে সেই ট্রাডিশন চলছে৷ নির্বাচন কমিশনের হাতে অবাধ্য বা অমান্যকারী প্রশাসনিক আধিকারিকদের শাস্তির ক্ষমতা, বদলি করে দেওয়ার শক্তি থাকে এবং কমিশন সেটা পালনও করে থাকে৷ বাংলাদেশে কি এমনটি হওয়া সম্ভব? ভারতের নির্বাচন কমিশন আয়কর দফতরকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের প্রার্থীদের ব্যয় তদারক পর্যন্ত করে থাকে৷ এক সময় তামিলনাড়ুতে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে বিধানসভা নির্বাচন স্থগিত করে দেন টিএন শেষণ৷ ওদিকে নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে যাচ্ছে বলে সর্বোচ্চ আদালতে যায় রাজ্যের শাসক দল৷ সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়ে বলে, ‘‘গণরায় হবে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায়৷ ভারতের বিচারব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনের কাজে প্রধান সহায়ক৷''

বাংলাদেশে এমনটি সম্ভব হয়নি৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, তেজগাঁও উপনির্বাচনে এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সে দেশের নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েনের সুপারিশ করে৷ কিন্তু তা মানা হয়নি৷ অর্থাৎ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে পারেনি৷ সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি৷

ভারতের নির্বাচন কমিশন একদিনে শক্তিশালী হয়নি৷ এর জন্য টিএন শেষণকে খণ্ড খণ্ড বহু যুদ্ধ লড়ে জিততে হয়েছে৷ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও বেশ জটিল৷ রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে সংসদের দুই কক্ষ—রাজ্যসভা ও লোকসভা, রাজ্য আইনসভা সবই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে৷ পঞ্চায়েত বা পুর ভোট হয় রাজ্য কমিশনের অধীনে৷ সে দেশের নাগরিক সমাজের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে ভোট পরিচালনায় মত প্রকাশ করে৷ বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের নির্বাচন নিয়ে নানা গবেষণা সহযোগী ভূমিকা পালন করে থাকে৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করাও বেশ শক্ত৷ সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে হলে যে যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়, তা এখানেও প্রয়োজন৷ নির্বাচন কমিশন ভারতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার৷

কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়৷ নির্বাচন কমিশন কত দিন ভোটারকে নিরাপত্তা দিতে পারে! ভোটের পর্ব মিটে গেলে আবার তো সেই রাজনৈতিক দলের নেতাদের ‘অধীনে' থাকতে হয়৷ তখন কেউ ক্ষমতায়, কেউ বা বিরোধী মঞ্চে৷ ভোটারদের অবাধ রায় প্রদানের ক্ষেত্রে এই ভয়-শর্তটিকে মোটেও উপেক্ষা করা যায় না৷

এমএ/ ০৮:২২/ ০৮ নভেম্বর

নির্বাচিত ব্লগারস

আরও লেখা

Bangla Newspaper, Bengali News Paper, Bangla News, Bangladesh News, Latest News of Bangladesh, All Bangla News, Bangladesh News 24, Bangladesh Online Newspaper
উপরে